দুর্বা ঘাসের উপকারিতা ও অপকারিতা


দূর্বা ঘাস সাধারণত আমরা সবাই চিনি দুর্বা ঘাস হিন্দুদের পুজো এবং মানুষের কোন জায়গায় কেটে গেলে সেই ক্ষত স্থানে দুর্বা ঘাস দিয়ে থাকে। তবে আজকে এই পোস্টে জানতে পারবেন দূর্বা ঘাসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে দূর্বা ঘাসের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
দুর্বা ঘাসের উপকারিতা ও অপকারিতা

পেজ সূচিপত্রঃ দুর্বা ঘাসের ছয়টি উপকারিতা

দুর্বা ঘাসের রস খাওয়ার নিয়ম

দূর্বা ঘাসের রস তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে দূর্বা ঘাস সংগ্রহ করতে হবে। এরপরে দুর্বা ঘাস গুলো পরিষ্কার পাত্রে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে তিন থেকে চারবার খুব সুন্দরভাবে দুর্বা ঘাস গুলি ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করা হয়ে গেলে একটি শিলপাটা দিয়ে দূর্বা ঘাস গুলিকে খুব সুন্দর ভাবে থেঁতো করে নিতে হবে। এরপরে দূর্বা ঘাস গুলি হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিয়ে দূর্বা ঘাসের রস ছাকনি দিয়ে গ্লাসে ছেঁকে নিতে হবে।

গ্লাসে থাকা দুর্বা ঘাসের রসের মধ্যে ৫০ গ্রাম দুধ এক চামচ চিনি দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন তাহলে তৈরি হয়ে যাবে দূর্বা ঘাসের রস। এটি খেলে আপনার শরীর প্রচুর পরিমাণ ঠান্ডা থাকবে এবং সর্দি-কাশি দূর করতে দুর্বা ঘাসের রস বেশ উপযোগী।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা

দূর্বা ঘাসের উপকারিতা

দূর্বা ঘাস যেসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে এমন কিছু রোগের নাম আমাশয়, অধিক ঋতুস্রাব, বমি ভাব, চুল পড়া, কেটে যাওয়া ও আঘাত জনিত রক্তক্ষরণ। দুর্বাগ ঘাসে রাসায়নিক উপাদান প্রচুর পরিমাণ থাকে দুর্বা ঘাসে টারপিনয়েড যৌগ যেমন আরুনডোইন,লুপিনোন ইত্যাদি থাকে এছাড়া দূর্বা ঘাসে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও বেশ কিছু এগ্রানিক্স এসিড পাওয়া যায়। 

দূর্বা ঘাসের অপকারিতা

দূর্বা ঘাসের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। দূর্বা ঘাসের মধ্যে অনেক ধরনের পোকামাকড় বিষাক্ত জীবজন্তু ঘুরে বেড়ায়। এই অবস্থায় যদি আপনার কোন রকম সমস্যা হয় অথবা আপনার শরীরে কোন স্থানে কেটে গেছে এমনকি আপনি দুর্বা ঘাসের রস খেতে চাইছেন এমনও তো অবস্থায়। যদি দুর্বা ঘাস পরিষ্কার পানি দিয়ে না ধুয়ে খেয়ে নিন অথবা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন।

দুর্বা ঘাসের উপকারিতা ও অপকারিতা

সেই ক্ষেত্রে আপনার ওই ক্ষতস্থানে অথবা যে রস আপনি এবং করেছেন এই দুই ক্ষেত্রেই আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই দুর্বার ঘাসের ব্যবহার করার আগে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। এতে আপনার অসুস্থ হওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং দুর্বা ঘাস থেকে আপনি উপকার পাবেন।

আরো পড়ুনঃ হাতিশুর গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

দূর্বা ঘাস চুলের যত্ন

চুলকে মজবুত এবং লম্বা করতে দূর্বা ঘাসের উপকারিতা অপরিসীম। দুর্বা ঘাস ব্যবহার করে কিভাবে চুলের যত্ন নিবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক। প্রথমে আপনাকে দূর্বা ঘাস সংগ্রহ করতে হবে এরপর দূর্বা ঘাসকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে একটি পাত্রে নিতে হবে। তারপর দুর্বা ঘাসের মধ্যে প্যারাসুট তেল খুব সীমিত পরিমাণ দিতে হবে তেল দেওয়া হয়ে গেলে দুর্বা ঘাসের পাত্রটি আগুনে অনেকক্ষণ চাপ দিতে হবে।

এতে করে দুর্বা ঘাসের ভেতরে থাকা বিভিন্ন ধরনের টক্সিক বেরিয়ে তা প্যারাসুট তেলের সাথে মিশ্রিত হবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে এটি আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আপনার চুল অনেক ঘন হবে এবং চুল খুব দ্রুত লম্বা হবে।

দুর্বা ঘাসের বৈশিষ্ট্য

দূর্বা এমন একটি ঘাস যা সকল মানুষের কাছেই পরিচিত এটির ব্যবহার অনেকে জানে আবার অনেকেই জানে না। দূর্বা ঘাস শিকড় জন্মিত কারণের ফলে এটি বিভিন্ন জায়গায় জন্মাতে পারে। এই ঘাস দ্বারা মানুষের ক্ষতস্থান রক্তক্ষরণ বমি ভাব দূর করা ঋতুস্রাব আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে যা মানুষের ছোট ছোট সমস্যা দুর্লভ বিকাশ ঘটায়।

দূর্বা ঘাসের ছবি

দুর্বা ঘাসের উপকারিতা ও অপকারিতা

দূর্বা ঘাস চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে

দুর্বা ঘাস চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এটি বর্তমান সকলেরই সাধারণ সমস্যা। চুল পড়া নিয়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে এই চুল পড়া থেকে মুক্তি পেতে দূর্বাঘাস ব্যবহার করুন। দুর্বা ঘাস ব্যবহার সময় অবশ্যই ফাস্টফুড অথবা জাঙ্ক ফুড কিংবা তেল জাতীয় খাবার গলি থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলো। এছাড়াও বিভিন্ন ময়লা পানিতে গোসল করার ফলে চুল পড়তে পারে। দুর্বা ঘাস ব্যবহারের সময় উপরে দেওয়া উক্তিগুলো থেকে অবশ্যই নিজেকে বিরত রাখবেন। এবং দুর্বা ঘাস ব্যবহার করে আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন।

ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে দুর্বা ঘাসের উপকারিতা

দূর্বা ঘাস রক্তে শর্করা মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে বিরত থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আজকে থেকে এক গ্লাস করে দূর্বা ঘাসের রস নিয়মিত পান করুন। এতে আপনার ডায়াবেটিস সমস্যা দূর হবে তার সাথে আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত দূর্বা ঘাস সেবন করতে হবে। দুর্বা ঘাসের প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্যর দূর করতে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য একটি মারাত্মক রোগ যার সমাধান এখন না করলে পট্টিতে আপনার পাইলসে রূপান্তরিত হতে পারে তাই এখন থেকে সতর্ক হয়ে যান এবং নিয়মিত দূর্বা ঘাস সেবন করুন।

পাইলসের সমস্যা দূর্বা ঘাসের উপকারিতা

আপনি কি পাইলস রোগে আক্রান্ত তাহলে আজকে থেকে দুর্বা ঘাসের পেস্ট করে তার সাথে দই মিশিয়ে খেতে পারেন। এই দূর্বা ঘাস সেবনে আপনি পাইলস রোগ থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন। এছাড়াও মেয়েদের যৌন সমস্যা দূর করতে দুর্বা ঘাস বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ব্রণ অথবা এলার্জি দূর করতে দুর্বা ঘাসের উপকারিতা

আপনি কি ব্রণ অথবা অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত তাহলে আজকে থেকে দূর্বা ঘাস ব্যবহার করা শুরু করুন। ব্রণ অথবা এলার্জি বিশেষ করে বয়সন্ধিকাল অথবা হরমোনের জন্য হয়ে থাকে মুখে ব্রণ থাকলে নিজেকে দেখতে অনেক খারাপ লাগে। তাহলে এই সমস্যা দূর করতে আপনি প্রতিদিন দূর্বা ঘাসের পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখবেন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করবেন আপনার ব্রণ এলার্জি রোগ থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন।

রক্ত পরিষ্কার করতে দুর্বা ঘাসের উপকারিতা

দূর্বা ঘাস মানুষের দেহের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে দুর্বা ঘাসে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান থাকায় এটি দেহের রক্ত বিষাক্ত পদার্থ বজ্র পদার্থের রূপান্তরিত করে। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা আরো অনেক দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই আজ থেকে নিয়মিত এক গ্লাস করে দূর্বা ঘাসের রস খেতে হবে তাহলে আপনার দেহের রক্ত পরিষ্কার এবং শারীরিক রোগবালাই দূর হবে।

দূর্বা ঘাস হজম শক্তি উন্নত করে

যাদের হজমশক্তি সমস্যা রয়েছে পেট ফুলে যাওয়া গ্যাসের সমস্যা তারা নিয়মিত দুর্গা ঘাসের রস খেতে পারেন এটি খাওয়ার নিয়ম সকালে ঘুম থেকে উঠে খেতে হবে। দূর্বা ঘাসের রস প্রতিদিন সকালে খেলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং গ্যাসের সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন। তাহলে আজকে থেকে অবশ্যই সকালে খালি পেট এক গ্লাস দূর্বা ঘাসের রস খাবেন

দুর্বা ঘাসে সেবনে পিত্তি থলিতে পাথর হতে পারে

দুর্বা ঘাসে কোষ্ঠকাঠিন্য আমাশয় ডায়রিয়া দূর হয় তেমনি আপনি যদি প্রচুর পরিমাণ দুর্ভাগ হাঁসের রস খেয়ে থাকেন সেই ক্ষেত্রে আপনার পিতৃ থলিতে পাথর হতে পারে। কারণ হলো দুর্বার ঘাসের প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে যা কিডনিতে পাথর জমায়।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা

দুর্বা ঘাস প্রচুর পরিমাণ শীতল প্রকৃতির হয়ে থাকে এর জন্য এটি কষ্টের সমস্যা দূর করতে পারে না। কোন ব্যক্তি যদি পরিমাণে থেকে বেশি দুর্বা ঘাসের রস খেয়ে থাকে এই ক্ষেত্রে তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দুর্বল ঘাসের রস খাওয়ার সময় অবশ্যই নিয়ম মাফিক দূর্বা ঘাসের রস খাবেন। এতে আপনার শরীরে দূর্বা ঘাসের উপকার পাবেন।

বিয়ের অনুষ্ঠানে দূর্বা ঘাসের ব্যবহার 

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দুর্বা ঘাসের প্রয়োজন অপরিসীম। বিশেষ করে হিন্দুদের বিয়েত দূর্বা ঘাসের ব্যবহার বেশি হয়। আদিবাসী সাংস্কৃতি দুর্বা ঘাস গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছে বিয়ে অনুষ্ঠান ডালা সাজাতে এই দুর্বা ঘাস প্রয়োজন হয়। নতুন বউ বরণ করাতে এই দুর্বা ঘাস সাজানোর ডালাও দূর্বা ঘাসের বিকল্প নেই।

ফুলের তোড়া তৈরিতে দূর্বা ঘাসের ব্যবহার

মানব জীবনে দূর্বাঘাসের ব্যবহার বলে শেষ করা যাবে না বিভিন্ন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এই দুর্বা ঘাস ব্যবহার করে থাকে। বর্তমান সময়ে দুর্বা ঘাস যদি একটি ফুলের তোড়াতে দেওয়া যায় তাহলে এটি খুব সুন্দর এবং মধুময় লাগে। বেশিরভাগ অংশে দেখা যায় মেয়েদের খোপায় মনোমুগ্ধকরভাবে দুর্বা ঘাস সাজানো হয়।

দূর্বা ঘাসের জন্মস্থান

দূর্বা ঘাস সাধারণত বারের আনাচে-কানাচে রাস্তার পাশে মাঠে-ঘাটে জঙ্গলে বাগানে দেখা যায়। মূলত যেখানে অন্য প্রকৃতির উদ্ভিদ জন্মগ্রহণ করতে পারে না সেখানে দূর্বাঘাস খুব অনায়াসেই জন্মগ্রহণ করে। দূর্বা ঘাস চাষ করার প্রয়োজন হয় না এটি বংশবিস্তার করে তার আয়ত্ত বাড়িয়ে থাকে যা অধিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

দুর্বা ঘাস মাটি ধরে রাখতে সাহায্য করে

দুর্গা ঘাস ছোট প্রকৃতির হলেও এটি প্রচুর পরিমাণ শিকড় ছড়িয়ে থাকে আর এটির বংশবিস্তার হয় শিকড় থেকে। দূর্বা ঘাসের প্রচুর পরিমাণ শিকড় হওয়ার ফলে এটি খুব তাড়াতাড়ি বংশবিস্তার করে এবং মাটি ধরে রাখতে সাহায্য করে। 

লেখকের শেষ কথাঃ দূর্বা ঘাস কেন খাবেন

দূর্বা ঘাস মানুষের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে বেশ কার্যকরী। দূর্বা সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আপনারা অবশ্যই পড়েছেন। এবং বুঝতেও পেরেছেন দূর্বা ঘাস কোন কোন কাজে লাগে এবং এটাও জেনেছেন দুর্বা ঘাস সেবন করলে কোন কোন সমস্যায় করতে পারে। ওপরে দেওয়া রোগ গুলো থেকে মুক্তি পেতে এবং সুন্দর জীবন যাপন করতে অবশ্যই দূর্বা ঘাস সেবন করুন এতে আপনার শরীরের সুস্থতা বজায় থাকবে এবং দেহের গঠন বৃদ্ধিতে বিকাশ ঘটবে। 😍😍


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url